Thursday 27 May 2021

চাকরিতে CV ও কাভার লেটার পাঠানোর সঠিক পদ্ধতি!


CV— এর সঙ্গে কাভার লেটার এবং সিভি তৈরি ও জমাদানের পদ্ধতির ভুলের কারণেই অনেক চাকরিতে CV প্রাথমিক বাছাইয়েই ছাঁটাই করে সরিয়ে ফেলা হয়। তাই সিভি সুন্দরভাবে লেখার পদ্ধতি, সিভি জমাদানের ফরমেট এবং সিভির কাভার লেটার কীভাবে লিখতে হয়— এসব সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে জানতে নিম্নের লেখাগুলো পড়ুন।

CV লেখার কৌশল এবং একটি সিভির স্ট্যাবিলিটি—
কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে বসে একটি ডামি টাইপের CV তৈরি করলেই তা চাকরির জন্য উপযুক্ত CV হয়ে যায় না।
আবার নিজের কম্পিউটার দিয়ে যেনতেনভাবে একটি সিভি তৈরি করলেই তা বাছাইয়ে টেকার মতো একটি আদর্শ সিভি হয়ে যায় না। উক্ত দুই প্রকার সিভিরই একই দশা হয়।
তাই একটি সফল CV তৈরি করতে নিম্নের লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ে নিন।

একটি সফল সিভির কিছু বৈশিষ্ট্য—
একটি সফল CV তে কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে যেমন—
এক) আপনি যে বিষয়ে অর্থাৎ যে ধরণের চাকরিতে আবেদন করছেন সেই চাকরি রিলেটেড আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার বিষয়টি জুম করে উপস্থাপন করবেন। সেইসঙ্গে অন্যান্য দক্ষতা যথা— ল্যাঙ্গুয়েজ স্কিল, কম্পিউটার স্কিল, কমিউনিকেশন স্কিল ইত্যাদি সাধারণভাবে উপস্থাপন করবেন।
আমি বেশকিছু প্রাইভেট স্কুলে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে চাকরি করার জন্য যে সিভি তৈরি করেছিলাম এবং চাকরি পেয়েছিলাম সেই সিভিটি দেখতে এখানে—ক্লিক—করুন

দুই) আর আপনি কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে চাকরির জন্য সেই রিলেটেড দক্ষতার বিষয়টি উপস্থাপন না করে যদি একটি সাধারণ সিভি তৈরি করে সেটিই সবখানে দিতে চান তাহলে আপনার সব দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সেই সিভিতে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করবেন। আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বিষয়ে বহু তথ্য থাকলে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো লিখবেন। এ ধরণের একটি সিভির নমুনা দেখতে এখানে—ক্লিক—করুন

তিন) সিভিতে যেন আপনার অবশ্যই কিছু এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস এবং সোশ্যাল ওয়ার্কস থাকে; এটা আপনাকে ব্যক্তিক পরিচয়ের পাশাপাশি একজন সামাজিক দায়বদ্ধ মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে ফুটে তুলবে যা চাকরিদাতা কতৃপক্ষের মনোযোগ আকর্ষণ করবে।
এটি আপনার সৃজনশীলতারও পরিচায়ক। তবে আপনার এরূপ কোনো কর্ম না থাকলে মিথ্যা তথ্য না দেওয়াই ভালো।

আর হ্যা, আপনাকে উক্ত নমুনায় দেখানো সিভির মতো ডিজাইন করে সিভি তৈরি করতে হবে এমনটি কিন্তু নয়। সিভি যেভাবেই তৈরি করেন সমস্যা নেই; শুধু তথ্যগুলো উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করবেন।
আরও বলতে হয়, আমার উক্ত সিভি দুইটির একটিতে আমি সিগনেচার পয়েন্ট দেইনি এবং একটিতে সিগনেচার পয়েন্ট দিলেও সিগনেচার অ্যাড করিনি। কিন্তু আপনারা অবশ্যই সিভিতে সিগনেচার অ্যাড করবেন।

সিভির ডকুমেন্ট ফরমেট—
অনেক চাকরিপ্রার্থীই doc/ docx ফরমেট অর্থাৎ Microsoft Word Document এ CV তৈরি করে সেই doc ফাইল তথা Word Document ফাইলটিই ই-মেইলে পাঠিয়ে থাকেন। আর এটা একটা বড় নির্বুদ্ধিতা। কারণ অন্য কম্পিউটারে চাকরিদাতা Word File ওপেন করলে MS Word সফটওয়্যার এর ভার্সন এবং Windows এর ত্রুটির কারণে অনেক সময়ই সিভির সেই লেখা ভেঙে বা সরে যায় যা আর দেখার উপায় বা আগ্রহ চাকরিদাতার থাকে না।
আবার, চাকরিদাতা ফোনে ই-মেইল অ্যাপ ব্যবহার করে সেসব সিভি ডাউনলোড করলে দেখা যায় বহু ফোনে MS Word ফাইল ওপেন করার সহযোগী অ্যাপস থাকে না, ফলে Word ফাইল ওপেন হয় না।
তাই চাকরিপ্রার্থীদের পাঠানো সেসব Word File তথা doc/ docx ফরমেটের সিভিগুলো চাকরিদাতারা একান্ত প্রার্থী সংকটে না পড়লে ওপেন কিংবা ডাউনলোডই করেন না।
তাই CV তৈরি করবেন Word Document এ আর তা পাঠানোর জন্য সেভ করবেন PDF ফরমেটে। Microsoft Word (doc/ docx) কে কীভাবে pdf এ রূপান্তর করতে হয় তা দেখতে এখানে—ক্লিক—করুন

কাভার লেটার কী এবং কীভাবে লিখতে হয়?
কোনো প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে সেখানে যে চাকরির আবেদনপত্র লেখা হয় সেটাই 'কাভার লেটার'। কাভার লেটারের সাথে CV এবং উল্লেখিত কাগজপত্রাদি সংযুক্ত করতে হয়; এই বিষয়টি প্রায় সকলেই জানে এবং যথাযথভাবে করে থাকে, কারণ বিজ্ঞপ্তিতে সবকিছু সুন্দরভাবে লেখা থাকে।
কিন্তু ই-মেইলে সিভি পাঠিয়ে আবেদন করার ক্ষেত্রে অনেক প্রার্থীই কাভার লেটার ছাড়াই CV পাঠিয়ে থাকে। এটা একটা নির্বুদ্ধিতা। কারণ এটা একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করার ফর্মালিটি এবং স্ট্যান্ডার্ড ফলো করে না আর এতে চাকরির আবেদনের বিষয়টিই ফুটে উঠে না। ফলে এটা প্রার্থীর কমনসেন্সহীনতার পরিচয় দিয়ে থাকে।
তাই চাকরিদাতার কাছে চাকরির জন্য সিভি পাঠালে অবশ্যই সেই সিভির সঙ্গে কাভার লেটারসহ দিতে হবে।
ই-মেইল এর 'Subject' এর স্থানে 'Job Application/ চাকরির আবেদন' কিংবা 'Job Application for the post of _______ / _______ পদে চাকরির আবেদন' লিখতে হবে এবং ই-মেইল এর বর্ণনার স্থানে কাভার লেটার লিখে দিতে হবে। আর ই-মেইল এর Attachment অপশনে গিয়ে CV এবং প্রয়োজনে উল্লেখিত কাগজপত্রাদির সফট কপি সংযুক্ত করে দিতে হবে।
নিম্নে বাংলা এবং ইংরেজিতে কাভার লেটার লেখার কিছু নমুনা দেওয়া হলো—
• বাংলায় লেখা কাভার লেটার দেখতে এখানে—ক্লিক—করুন
• English এ লেখা কাভার লেটার দেখতে এখানে—ক্লিক—করুন

আবার, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ই-মেইলের বর্ণনায় কাভার লেটার দেওয়ার পাশাপাশি CV অ্যাটাচমেন্ট করার পদ্ধতিতে কাভার লেটারের পিডিএফ কপিও সিভির সাথে একই ই-মেইলে সংযুক্ত করে দিতে হয়।

নিজস্ব ই-মেইল আইডি থেকে CV পাঠাতে হবে—
অনেক প্রতিষ্ঠান ফোন না করে কিংবা কোনো চিঠি না পাঠিয়ে শুধু ই-মেইলের রিপ্লাই দিয়েই প্রাথমিকভাবে বাছাইকৃত প্রার্থীদেরকে লিখিত পরীক্ষা কিংবা ইন্টারভিউ এর জন্য ডেকে থাকেন; এটাকে তারা চাকরিপ্রার্থীদের সিনসিয়ারিটি হিসেবে মূল্যায়ন করে থাকেন। তাই চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের ই-মেইলে CV পাঠাতে হলে তা অবশ্যই নিজস্ব ই-মেইল আইডি থেকে পাঠাতে হবে এবং নিয়মিত ই-মেইল ইনবক্স চেক করতে হবে।

অনলাইন আবেদন, ই-মেইল আবেদন এবং সিভির হার্ডকপি পাঠিয়ে আবেদন সবই থাকলে কোনটি করা ভালো হবে?
আমি সিরাজগঞ্জে একটি বেশ ভালো প্রাইভেট স্কুলে চাকরি পেয়েছিলাম। সেখানে যা ঘটেছিল তা বললেই আপনাদের এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। সেখানে হার্ডকপি পাঠিয়ে আবেদন করার অপশনই ছিল না, সেখানে আবেদনের পদ্ধতি ছিল বিডিজবস.কম এ বিজ্ঞপ্তির সাথেই সংযুক্ত "Apply Online" অপশনে ক্লিক করে আনলাইনে আবেদন করা। কিন্তু অনেকেই গুগলে/ ফেসবুকে সেই প্রতিষ্ঠানের নাম সার্চ করে সেই স্কুলের ফেসবুক পেজ থেকে হেল্পলাইন নাম্বার নিয়ে তাতে ফোন করে স্কুলের পূর্ণ ঠিকানা জেনে নিয়ে ডাকযোগে অফিসে সিভি পাঠিয়েছিল। নতুন প্রতিষ্ঠিত স্কুল হওয়ার শিক্ষকের শূন্যপদ ছিল ২০ টির মতো। সেখানে বিডিজবস.কম এ অনলাইনে তাদের কাছে আবেদন পড়েছিল ১০০০ এর উপরে এবং অফিসে ডাকযোগে সিভি এসেছিল ২৫০ এর মতো।
চাকরিদাতাদের কাছে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য কিছু প্রিন্টকপি নিয়ে বসে পর্যালোচনা করা যতটা সহজ ই-মেইলে সিভির সফট কপি ডাউনলোড করে সেগুলো একটা একটা করে ওপেন করে পর্যালোচনা করা সে তুলনায় অনেক অনেক বেশি কঠিন, আর অনলাইন আবেদন পর্যালোচনা করে বাছাই করার বিষয়টা ই-মেইলে গৃহীত সিভির সফটকপি ভিউ করে পর্যালোচনা করার চেয়েও অনেক বেশি কঠিন। এরূপ ক্ষেত্রে চাকরিদাতারা প্রথমে হার্ডকপির আবেদনগুলো দেখেন, সেখানে উপযুক্ত প্রার্থী না পেলে ই-মেইল থেকে পিডিএফ সফটকপির সিভিগুলো দেখেন এবং সেখানেও উপযুক্ত প্রার্থী না পেলে তারপর অনলাইনে তথা বিডিজবস.কম এ তাদের অ্যাকাউন্টে জমা পড়া আবেদনগুলো দেখেন।
সেই স্কুলের নিয়োগ বোর্ডকে অনলাইনে জমা পড়া আবেদনগুলো দেখার প্রয়োজনই হয় নাই। অফিসে ডাকযোগে পাঠানো সিভিগুলো পর্যালোচনা করেই তারা নিয়োগ সম্পন্ন করেছেন। এক্ষেত্রে আমার মতো যারা সিভির হার্ডকপি জমা দিয়েছিল তাদের মধ্যেই নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছিল।
তাই বুঝতেই পারছেন এই তিন প্রকারের পদ্ধতিই কিংবা কোনো দুইটি পদ্ধতি থাকলে কী করতে হবে।

© ফিচার লেখক : মেহেদী হাসান, উদ্যোক্তা, Freshers' Jobs Bangladesh
ফেসবুক : facebook.com/mahadihasan24

চাকরি-বাকরি বিষয়ে আরও পড়ুন→



লোকাল কমিউনিকেশন মিডিয়া তৈরি করে আয় করতে চাও?
তাহলে একটি নমুনা দেখতে পৃথিবীর প্রথম আঞ্চলিক কমিউনিকেশন মিডিয়া 'চতরাপিডিয়া' এর ওয়েবপেজ দেখে নাও।
চতরাপিডিয়ার ওয়েবপেজ ভিজিট করতে এখানে এখানে—ক্লিক—করো

Chatrapedia — Simplifying Life

No comments:

Post a Comment